যেসব ভুলের কারণে স্বপ্ন ভাঙল ক্রোয়েশিয়ার

বপ্ন দেখেছিল বিশ্ব। এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবেন বিশ্বকাপে। স্বপ্ন দেখছিল ক্রোয়েশিয়াও। বিশ্বকাপের ইতিহাসে রূপকথা তৈরি করার। যে ফুটবল তাঁরা উপহার দিয়েছে গোটা বিশ্বকাপে। যে সৃজনশীলতা দেখা গিয়েছিল তাঁদের খেলায়,ক্রোয়াট লুকা মদ্রিচরা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিশ্বকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেল সামান্য কয়েকটা ভুলে। বিশ্বকাপের ফাইনালে কয়েকটি ভুলই শেষ করে দিল ক্রোয়েশিয়াকে। অনভিজ্ঞতা আর সেইসঙ্গে ক্লান্তির কোপে এদিন রূপকথা গড়া থেকে দূরে রয়ে গেলেন ক্রোট ফুটবলাররা। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই স্বপ্নের ফুটবল উপহার দিচ্ছিলেন মড্রিচ-রা। প্রত্যাশার থেকেও তাঁদের কাছ থেকে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গিয়েছিল এবার। সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হত যদি ক্রোয়েশিয়া চ্যাম্পিয়ন হত। কিন্তু তা হল না, রূপকথা রচনা হল না এবারও।

*অনভিজ্ঞতা বাধা হয়ে দাঁড়াল ক্রোয়েশিয়ার
বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় আসরে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না ক্রোয়েশিয়ার এই কোচ-ফুটবলারদের। শুধু বিশ্বকাপই বা কেন ইউরো কাপেও সেভাবে সাফল্য পায়নি। তাই বিশ্বকাপ ফাইনালে যেভাবে দল সাজানো দরকার ছিল, তা হয়নি। এমবাপের দৌড় থামানের মতো কোনও পরিকল্পনা নিতে পারেননি কোচ। কিংবা ফ্রান্সের দলটার নিউক্লিয়াস হলেম গ্রিজম্যান আর পোগবা। তাঁরাই খেলা তৈরি করেন। কিন্তু গ্রিজম্যানদের খেলা তৈরি আটকানোরও কোনও পরিকল্পনা ছিল না ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে। শুধু বল পজেশন বেশি রাখার দিকে নজর দিয়েই খেলা থেকে হারিয়ে গেল ক্রোয়েশিয়া।

*দুর্দান্ত শুরু, সাদামাটা শেষ
এবার বিশ্বকাপে অসাধারণ শুরু করেছিল ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপ লিগের তিনটি ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মড্রিচরা। এমনকী মেসির আর্জেন্তিনাকেও তাঁরা ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল। গ্রুপ লিগে অল উইন করে তাঁরা উন্নীত হয়েছিল নক আউট পর্বে। নক আউট পর্বে পর পর তিনটি ম্যাচে তাঁরা ১২০ মিনিট করে লড়াই করেছে। তিনটি ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ আবার টাইব্রেকারে জয় পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল্ডেন গোলে জয়। পুরো টুর্নামেন্টে যে লড়াই উপহার দিয়েছিলেন মড্রিচ, ফাইনালেও সেই লড়াই আশা করেছিলেন ফুটবল প্রেমীরা। কিন্তু এদিন ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল না ক্রোয়েশিয়ার। তার উপর ভর করেছিল ক্লান্তিও।

*ক্লান্তিই দায়ী স্বপ্নভঙ্গে
পরপর তিনটি ম্যাচ ১২০ মিনিটের লড়াই। তার উপর প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালের চাপ। শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক চাপেই ক্রোয়েশিয়া শেষ পর্যন্ত লড়াই জারি রাখতে পারল না। বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় আসরে ৪-২ গোলে হেলে গেল ফ্রান্সের কাছে। যদিও পরিসংখ্যানের মতো গোহারা হয়নি ক্রোয়েশিয়া। কিন্ত্র ফ্রান্সের পরিকল্পনার কাছে শেষ হয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়ার সব জারিজুরি। বল পজেশন বেশি রেখেও হার মানতে বাধ্য হয়েছে। এমবাপেদের দৌড় কিংবা গ্রিজম্যানের প্লে-মেকিং রুখতচে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ক্লান্ত লেগেছে ফ্রান্স ডিফেন্সকে। ডিফেন্ডারদের অদম্য লড়াই ফ্রান্স ম্যাচে দেখা যায়নি। তারই ফলে হারতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে।

*তারুণ্যের তেজে ছারখার মাদ্রিচরা
ফরাসি কোচ দেঁশ দু-বছর আগেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দলটা তৈরি করেছিলেন। ছেঁটে ফেলেছিলেন তিরিশোর্ধ সমস্ত খেলোয়াড়কে। এমনকী করিম বেঞ্জেমার মতো প্লেয়ারকেও তিনি সুযোগ দেননি। দল তৈরি করেছিলেন ২২ থেকে ২৬ বছর বয়সি ছেলেদের নিয়ে। আর তার ফল তিনি পেয়েছেন হাতেনাতে। স্রেফ গতি দিয়ে বাঘা বাঘা প্লেয়ারদের ঘায়েল করে দিয়েছেন এমবাপেরা। এমবাপের দৌড় থামাতে না পেরেই অনেক ক্ষেত্রে হেরে বসেছে বিপক্ষ। তাই তো আর্জেন্তিনার মতো দলকে এমবাপেকে থামাতে পেনাল্টি উপহার দিতে হয়। মাত্র ১০ মিনিটের ঝড়ে উড়িয়ে দিতে পারেন মেসিদের। তেমনই এদিনও দ্বিতীয়ার্ধে পরপর দু-গোলই শেষ করে দিল ক্রোয়েশিয়ার যাবতীয় আশা। কারণ ক্রোয়েশিয়ার টিমটারও সমস্যা তিরিশোর্ধ প্লেয়ার। এই দলটার অধিকাংশ প্লেয়ারদেরই বয়স ২৯ থেকে ৩২।

*ফাইনালের মতো বড় আসলে ছোট ভুল
বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় আসব বলে কথা। সেখানে একটা ছোট ভুলই বড় হয়ে দেখা দেয়। তেমনটাই হল এবার ফাইনালে। ক্রোয়েশিয়া প্রথম গোলটা খেল ডিফেন্সের ভুলে। নিজেরাই হেড করে বল ঢুকিয়ে দিল নিজেদের গোলে। আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর যদিওবা একটি অসাধারণ গোলে সমতায় ফিরেছিল ক্রোয়েশিয়া, তারপর বক্সে বলে হাত লাগিয়ে পেনাল্টি উপহারেই শেষ হয়ে যায় আশা। গ্রিজম্যানের পেনাল্টি গোলের পরও লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মড্রিচরা। কিন্তু সেই লড়াই বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পোগবার একটা দুরন্ত শটই গোলে আশার সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয় প্রায়। আর বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে এমবাপের নেওয়া গড়ানো শটে সুবাসিচের গোল খেয়ে যাওয়া কফিনে শেষ পেরেক পুতে দেয়। এরপর যদিও ফ্রান্সও একটা বালখিল্য করে বসে। গোলরক্ষক বল কাটাতে গিয়ে উপহার দেয় গোল। কিন্তু তিন গোলের ব্যবধান থাকায়, তা বুমেরাং হয়নি।